মাসুম ইসলাম বাঘা ( রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় যুবসমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় পেশা (কাজ) ইমু হ্যাকিং। আর এই সকল যুবকেরা হ্যাকিং এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। হ্যাকিং এর শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত প্রবাসীদের পরিবার। বর্তমানে উপজেলাটির (গড়গড়ি, পাকুড়িয়া, মনিগ্রাম, বাজুবাঘা, বাউসা ইউনিয়ন ও বাঘা পৌরসভা এলাকায়) প্রায় ১০০০ হাজার এর বেশি যুবক হ্যাকিং কেই তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে গড়গড়ি, পাকুড়িয়া,মনিগ্রাম ইউনিয়ন ও বাঘা পৌরসভা এলাকায় হ্যাকার চক্রের সদস্য সংখ্যা বেশি বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে।

সূত্রে জানাযায়, ইমু হ্যাকার চক্রের উৎপত্তি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা থেকে। বিষয়টি জানার পরে নড়ে ওঠে নাটোর জেলা পুলিশ। শুরু করে হ্যাকার নিধন অভিযান। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বেশকিছু হ্যাকার সদস্য আশ্রয় নেই বাঘা উপজেলায়। অল্প সময়ের মধ্যেই বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায় এই হ্যাকারদের তথ্য। আশ্রয় নেওয়া হ্যাকারদের থেকে হ্যাকিং শিখতে শুরু করে বাঘা উপজেলার কিছুসংখ্যক যুবক। বিষয়টি বেশ আকর্ষণীয় ও লোভনীয় হওয়াতে এ পেশায় নাম লিখায় অল্পসংখ্যক কিছু বিপদগামী কিশোর ও যুবক। এ উপজেলায় সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে হ্যাকার চক্রের সদস্য, বর্তমানে তা প্রায় ১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হ্যাকিং পেশায় একটি স্মার্ট ফোন, বেনামী বিকাশ, রকেট, নগদ সিম হলেই এই কাজ (হ্যাকিং) প্রাথমিক ভাবে শুরু করা যায়। এরপর হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলে প্রবাসীদের ইমু হ্যাক করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তারপর শুরু করে খেলা। প্রবাসীদের ইমুতে যুক্ত থাকা বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ী, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার দের করে টার্গেট। অধিকাংশ প্রবাসীরাই শিক্ষাগত যোগ্যতায় অনেকটাই দুর্বল, আর তাদের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরই পরিচিত জনদের কাছে পাঠানো এসএমএস, ভয়েস এসএমএস , চ্যাট লিস্টে থাকা অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও অথবা পুলিশ বা এম্বুলেন্স গাড়ির সাইরিন বাজিয়ে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এই হ্যাকারদের প্রতারক বা ব্ল্যাকমেইলার বললেও ভুল হবেনা।

অধিকাংশ সময় হ্যাকার দের কৌশলের কাছে হারমানতে বাধ্য হয় পুলিশ প্রশাসন। যেমন টাই হচ্ছে এ উপজেলাতেও। বাঘা থানায় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ যোগদানের পরে উপজেলার সকল বিকাশ ব্যবসায়ী দের নিয়ে হ্যাকার বিরোধী মত বিনিময় করে এবং সেই আলোচনা তে বিকাশ এর মাধ্যমে লেনদের কারী সকল গ্রাহকদের থেকে তাদের নিজ জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন। এই বার হ্যাকাররা কৌশল পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা নিজেদের পরিচিত ব্যাক্তিদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে ( যে সকল এলাকায় টাকা উত্তোলন করতে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হয়না) এবং সেই টাকা পরবর্তীতে নিজেদের ব্যক্তিগত বিকাশ, রকেট, নগদ বা ব্যাংক একাউন্টে নিয়ে নেই। এতে করে কালো টাকা সাদা হয়ে যায়। তারা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসন পরে গ্লোলক ধাঁধায়।

এবিষয়ে উপজেলার আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, বর্তমানে মোবাইল হ্যাকিং একটি বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে হ্যাকিং বিষয়টা নিয়ে শংঙ্কায় আছি। হ্যাকারদের নির্মূলে পুলিশ প্রশাসন কে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।

বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন সাজু বলেন , আমি যোগদানের পরেই বাঘা থানার সকল বিকাশ দোকানদারদের থানায় ডেকে নিয়ে মতবিনিময় করেছি। কোন ব্যক্তি যদি ৩ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে উত্তলন করে, তবে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি বা নাম্বার রাখতে পরামর্শ দিয়েছি বিকাশ দোকানদার দের। ডিজিটাল অপরাধী চিহ্নিত হ্যাকার দের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আটক ও মামলা দেওয়া হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক কোন ছাড় দেওয়া হবে না।