তীব্র দাবদাহের অবসান, তবে জলাবদ্ধতা, যানজট ও ভোগান্তিতে বিপর্যস্ত মানুষ
মোঃ মাহফুজুর রহমান ফরহাদ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি | ৬ জুলাই ২০২৫
কয়েক সপ্তাহের তীব্র গরম ও খরতাপের পর কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। এই বৃষ্টিতে যেমন কিছুটা শান্তি ফিরে এসেছে জনজীবনে, তেমনি দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতা, যানজট ও গণপরিবহন সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বস্তির বৃষ্টি
বুধবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, পরে তা রূপ নেয় মুষলধারে বৃষ্টিতে। কয়েকদিন ধরে ইটনা ও আশেপাশের অঞ্চলজুড়ে বিরাজ করছিল প্রচণ্ড গরম, যার তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। সেই পরিস্থিতিতে এই বৃষ্টি যেন ছিল এক টুকরো প্রশান্তির পরশ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এবং এই অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
জলাবদ্ধতায় নাকাল জনজীবন
তবে এই স্বস্তির বৃষ্টিই আবার হয়ে উঠেছে ভোগান্তির আরেক নাম। ইটনা বাজার, রাস্তাঘাট ও নিচু বিপাকে।
বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং জরুরি কাজে বের হওয়া সাধারণ জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। অনেকে বাধ্য হয়ে ভিজে কাপড়েই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
বৃষ্টির কারণে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোর চার্জ শেষ হয়ে যায় অনেক দ্রুত। সেই সঙ্গে জলাবদ্ধ রাস্তায় অটো চলাচল ব্যাহত হয়। এতে যাত্রী সংকটও বেড়ে যায় বহুগুণ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। কয়েক ঘণ্টা একই স্থানে আটকে থাকতে দেখা গেছে শত শত অটোরিকশা।
স্থানীয় চালকদের অভিযোগ, অটোর সংখ্যা থাকলেও নেই যথাযথ চার্জিং সুবিধা। অন্যদিকে, বাজার এলাকায় নেই পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস, ফলে যানজট হয় নিয়মিত, বৃষ্টির সময় তা চরমে পৌ
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের মতে, ইটনার বর্তমান নগর ব্যবস্থাপনা একেবারেই অদক্ষ। সামান্য বৃষ্টিতেই বাজার এলাকা ও আশেপাশে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, খোলা নর্দমা, এবং অব্যবস্থাপনার কারণে সমস্যার তীব্রতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
ইটনার একজন স্থায়ী বাসিন্দা ও জানান
“প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমরা একই সমস্যার সম্মুখীন হই। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। কিন্তু পৌরসভা বা উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।”
মতে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম, রাস্তার উচ্চতা বৃদ্ধি, ও পর্যাপ্ত অটোচার্জিং স্টেশন ও পার্কিং ব্যবস্থা। স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা, নাগরিক সচেতনতা ও সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটাতে পারলে এ সমস্যা নিরসন সম্ভব।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রতিবারই প্রশাসন সমস্যা ‘চিহ্নিত’ করে কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষাগুলোতেও দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
স্বস্তির বৃষ্টি ইটনাবাসীর তীব্র গরম থেকে সাময়িক মুক্তি দিলেও নগর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা নগরবাসীকে ফেলেছে নতুন দুর্ভোগে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ, আধুনিক পরিকল্পনা ও নাগরিক সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো বিকল্প নেই