মোঃ রিফাত আহমেদ, ঢাকা। ১১ জুলাই, ২০২৫
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় আজ দুপুরে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক ঘটনা। রাশেদুল ইসলাম নামে এক সৎ ও নিরীহ মুদি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। চাঁদা না দেওয়ার কারণেই তার এই মর্মান্তিক পরিণতি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাশেদুল ইসলাম রাজনীতি করতেন না। এলাকার বহুদিনের পরিচিত মুখ, একজন পরিশ্রমী মানুষ। কারও সঙ্গে তার বিরোধ বা শত্রুতা ছিল না। অথচ তাকে শুধু এ কারণে হত্যা করা হলো যে, তিনি এক যুবদল নেতা পদপ্রার্থীর চাঁদার দাবি মানেননি।
দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে, দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার সময় বংশাল রোডের মাথায় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার পথরোধ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে তারা। রাশেদ রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এরপর যা ঘটে তা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় এলাকার মানুষ।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“ভাই, সে কিছুই বলেনি… শুধু বলছিল, ভাই আমারে মাইরেন না… আমার বাচ্চা আছে…। কিন্তু ওরা থামেনি। মানুষ মারার পর লাশের উপর দাঁড়ায়া হাত তুলতেছিল, হাসতেছিল। আমরা চোখের সামনে দেখলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না।”
আরেক দোকানদার বলেন,
“রাশেদ ভাই ভালো মানুষ আছিল। উনি বলছিলেন, আমি চাঁদা দিব না। রাজনীতি করি না। এখন চাঁদা না দিলেই যদি জীবন যায়, তাহলে তো আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি।”
স্থানীয় এক পথচারী জানালেন,
“ঘটনাটা ৩-৪ মিনিটেই শেষ। রাস্তা ভর্তি মানুষ, কেউ কিছু করেনি। আমরা শুধু ভয় পেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারণ আমরা জানি, যারা মারছে, তারা শক্তিশালী দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কিছু বললে, পরের লাশ হয়তো সে-ই হতো।”
এই ঘটনাটির ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন রক্তাক্ত দেহের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের ভঙ্গিতে হাত তুলছেন, হাঁসছেন—যেন এটা কোনো উৎসব।
পুলিশ বলছে, “তদন্ত চলছে”, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, যা জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার পর থেকেই এলাকাজুড়ে শোক, ক্ষোভ আর আতঙ্কের পরিবেশ। নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলছেন—এ কেমন দেশ, যেখানে চাঁদা না দিলে প্রকাশ্যে খুন হতে হয়? প্রশাসন কেন নীরব? আর সমাজ কেন নিশ্চুপ?
এই ঘটনা যেন কেবল রাশেদের মৃত্যু নয়, বরং বিবেকের মৃত্যু।
এই লজ্জা রাষ্ট্রের একার নয়, আমাদের সবার।