নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ● শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫ ইং (১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) — বিশিষ্ট পণ্ডিত, ব্রাহ্মধর্ম-প্রচারক, লেখক, সাংবাদিক ও সম্পাদক গিরিশ চন্দ্র সেনের ১১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৩৪ সালে নরসিংদীর পাঁচদোনা গ্রামে জন্ম নেওয়া এই বহুমুখী প্রতিভা ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলা ভাষায় কুরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক হলেন মৌলভী নইমুদ্দীন। তাদের অনুবাদটি ১৮৩৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো।
গিরিশচন্দ্র সেন বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের জন্য পরিচিত হলেও, তিনি আসলে এটি প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৮৬ সালে তিনি মৌলভী নইমুদ্দীনের করা অনুবাদটি পুস্তক আকারে প্রকাশ করেন।
এজন্য তিনি ‘ভাই গিরিশ চন্দ্র’ নামে সমধিক পরিচিতি পান এবং মুসলিম সমাজে ‘মৌলভী’ উপাধিতেও সম্মানিত হন। আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইসলামী বিষয়াবলীতে তাঁর ছিল গভীর পাণ্ডিত্য।
পেশাগত জীবনের শুরু ময়মনসিংহে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে নকলনবিশ হিসেবে। পরে শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় যুক্ত হন। ‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকায় কাজ শুরু করে তিনি পরবর্তীতে ‘সুলভ সমাচার’, ‘বঙ্গবন্ধু’ ও মাসিক মহিলা পত্রিকার সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৮৭১ সালে কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর প্রভাবে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। ধর্ম, দর্শন ও মানবতার অনুসন্ধানে ভ্রমণ করেন ভারত ও ব্রহ্মদেশ। ১৮৭৬ সালে লক্ষ্ণৌয়ে গিয়ে ইসলামি সাহিত্য ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং আরবি ভাষায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪২টি, যার মধ্যে তাপসমালা (৯৬ জন ওলি-আউলিয়ার জীবনচরিত), তত্ত্বরত্নমালা, হাদিস-পূর্ব বিভাগ, মহাপুরুষ মোহাম্মদ ও তৎপ্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম, এমাম হাসান ও হোসায়নের জীবনী, চারিজন ধর্মনেতা, চারটি সাধ্বী মুসলমান নারী, খলিফাবর্গ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর গ্রন্থসমূহ মুসলিম সমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
শিক্ষা, সাহিত্য ও ধর্মচর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য গিরিশ চন্দ্র সেন আজও স্মরণীয় সর্বধর্মসমন্বয়ের প্রতীক হিসেবে।