আসাদুজ্জাৃমান,প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এমপিওভুক্ত এক কলেজে নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা, নেই হাজিরা খাতা। তবু নিয়মিত বেতন তুলছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরীক্ষা হয় ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে, আর টাকা দিলেই মিলছে সনদ।
উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের পাশে কিসমত উল্লাহ বালাজান কৃষি ও কারিগরি ইনস্টিটিউট কলেজ। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। কলেজটিতে ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৭ জন এমপিওভুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালী আমজাদ হোসেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ কলেজ মূলত সনদ বিক্রি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন কলেজে এসে কেবল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আয়া শারমিন আকতার। শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষ তালাবদ্ধ। নেই বেঞ্চ, নেই শিক্ষক, নেই শিক্ষার্থী। অথচ পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে, শিক্ষার্থীর নাম, রোল কিংবা স্বাক্ষর নেই। কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মতিন ঢাকায় থাকেন, শুধু পরীক্ষার সময় আসেন। অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরাও নিয়মিত অনুপস্থিত থেকে বেতন নিচ্ছেন।
অফিস সহকারী আমজাদ হোসেনই কলেজের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কলেজের মাঠের মাটি কেটে নিজ বাড়িতে ভরাট করেছেন তিনি। নিয়োগেও অনিয়ম হয়েছে। তার চাচাতো ভাই সুরুজ্জামান ২০২৪ সালে অফিস সহকারী পদে যোগ দেন। কিন্তু তিনি প্রকৃত বয়স গোপন করে ভুয়া কাগজপত্রে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুবক জানান, ভর্তি না হয়েও ২০ হাজার টাকায় কলেজ থেকে সনদ পেয়েছেন তিনি। আর নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য দিতে হয়েছে দুই লাখ টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আমজাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব রয়েছে। কেউ মুখ খুললে মামলা-মোকদ্দমার ভয় দেখানো হয়। তাই বছরের বেশিরভাগ সময় কলেজ বন্ধ থাকলেও কেউ কিছু বলতে সাহস পান না।
ল্যাব সহকারী রাজু মিয়া স্বীকার করেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাজিরা খাতা নেই। তবে তিনি দাবি করেন, স্টাফরা নিয়মিত আসেন। সুরুজ্জামান ভুয়া এনআইডির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দুটো এনআইডি কার্ডের কথা অস্বীকার করে বলেন আমি ২০২০ সালে এসএসসি পাস করেছি। সেই সনদ দিয়ে ভোটার হয়েছি, চাকরি করার জন্য। তিনি ২০০২ সালে এসএসসি পাস এবং ১৯৮৫ সালে জন্ম তারিখের বিষয় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী জানান, পরীক্ষার খাতায় তাঁর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি ব্যবহারিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছিলাম, তবে ওই স্বাক্ষর আমার নয়।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, 'এমন প্রতিষ্ঠান আছে বলে আমার জানা ছিল না। অনিয়মের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'