বুলবুল আহমেদ বুলু বদলগাছী(নওগাঁ )প্রতিনিধি:- কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি খলসানি।
বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ খলসানি তৈরি করে শত বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে নওগাঁর বদলগাছী উজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামের প্রায় অধিকাংশ পরিবার। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বছরের ৬ মাস তাদের ব্যবসা ভাল চললেও বাকি ছয় মাস অভাব-অনটনে কাটে কারিগরদের সংসার ।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই খলসানির চাহিদা তুলনামূলক বেড়ে যায়। সে কারণে উপজেলার উজালপুর গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ খলসানি বানানোর কাজে। স্থানীয়ভাবে এর নাম খলসানি হলেও কোথাও কোথাও চাঁই বা ঢেউল নামেও পরিচিত এই মাছ ধরার বাঁশের যন্ত্রটি।
জৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত খলসানি বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কিছুটা স্বচ্ছলতায় দিন কাটে তাদের। বছরের বাকি ৬ মাস অন্য কাজ করে কোন মতে সংসার চালাতে হয় বলে জানান এই গ্রামের খলসানি তৈরির কারিগর ও বিক্রেতারা।
একসময় জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও ধান ক্ষেত পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বাঁশের তৈরি মাছ ধরার এই বিশেষ ধরনের ফাঁদ খলসানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন আর সে অবস্থায় নেই। সে স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারেন্ট জাল। ফলে হাট-বাজারে খলসানির আমদানির তুলনায় বেচা-বিক্রি কম বলে জানান স্থানীয় খলসানি বিক্রেতা।
তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখানকার তেরি চাঁই বা খলসানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান কারিগররা । উপজেলার কোলা ,ভাণ্ডারপুর,গোবরচাপা ,
পাহাড়পুর ,বদলগাছী হাটে এই সব খলসানি বিক্রি হচ্ছে ।
বাজারে এখন প্রতি পিচ খলসানি বিক্রি হচ্ছে ছোটগুলো ৪৫০ টাকা আর বড় গুলো ৫৫০ টাকা।
রুচির পরিবর্তন আর যান্ত্রিকতার দাপটের পরেও এই হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য শত বছরের পুরনো বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উজালপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক এই দরিদ্র পরিবারগুলো। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা বা ঋণের সুবিধা পেলে তাদের এ পৈত্রিক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হতো বলে জানান এই গ্রামের খলসানি তৈরি কারিগরেরা ।

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে এই নান্দনিকতা পূর্ণ হস্তশিল্পটি অন্যদিকে খলসানী তৈরির কারিগররা খুঁজে পাবে স্বাবলম্বী হবার পথ, এমন প্রত্যাশা করছেন বদলগাছীর মিঠাপুর ইউনিয়নের হিন্দু পল্লি উজালপুর গ্রামের এই দরিদ্র পরিবারগুলোর।