আরিফ হোসেন
জেলা প্রতিনিধি, ভোলা
ভোলা জেলার দৌলতখানসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনু (পোনা) আহরণ ও বিক্রির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীরা জড়িত, যা মৎস্য সম্পদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
দৌলতখান ও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি
দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় মেঘনা নদী ও ডুবোচরে মশারি জাল, বিহিন্দীসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল ব্যবহার করে চিংড়ির রেনু আহরণ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি চিংড়ির রেনু ধরার সময় ৯-১২টি অন্যান্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে, যা নদীর জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের জন্য হুমকিস্বরূপ ।
জেলেদের দাদন ও প্রভাবশালীদের ভূমিকা
প্রভাবশালী আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের অগ্রিম অর্থ দিয়ে রেনু আহরণে উৎসাহিত করছে। জেলেরা প্রতিদিন হাজার হাজার রেনু আহরণ করে স্থানীয় আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছে, যা পরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় ।
প্রশাসনের নিরবতা ও দুর্নীতি
স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের নিরব ভূমিকা এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এতে করে অবৈধ রেনু আহরণ ও পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে ।
পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি
এই অবৈধ রেনু আহরণে নদীর অন্যান্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে, যা মৎস্য সম্পদের উপর দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, স্থানীয় জেলেরা দাদনের ফাঁদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সুপারিশ
কঠোর নজরদারি ও অভিযান: মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।
দাদন প্রথা নিয়ন্ত্রণ: জেলেদের দাদনের ফাঁদ থেকে মুক্ত করতে বিকল্প অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান।
সচেতনতা বৃদ্ধি: জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে অবৈধ রেনু আহরণের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
এই অবৈধ রেনু আহরণ বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। অন্যথায়, মৎস্য সম্পদের উপর এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।