শাকিব হোসেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধিঃ
২১জুন,২০২৫ শনিবার “নিঃস্বার্থ সেবার বাঁধনে, মিলেছি মোরা হৃদয়ের তানে”—এই স্লোগান ধারণ করে খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো জেলার ইতিহাসে অনন্য এক আয়োজন, ‘স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা’। জেলার নয়টি উপজেলার অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একত্রিত হয়ে এই উৎসবকে পরিণত করে তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এক সামাজিক মহাসম্মেলনে।
শনিবার (২১ জুন) খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটন স্পট আলুটিলার অ্যামফিথিয়েটার প্রাঙ্গণ জুড়ে দিনব্যাপী চলে এই মিলনমেলা। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা, হালকা বৃষ্টিতে সিক্ত প্রকৃতি যেন নিজেই হয়ে উঠেছিল এই মানবিক উদ্যোগের অংশীদার। বৈরী আবহাওয়াও থামাতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণ ও উদ্দীপনা—প্রত্যেকে ছিলেন রঙিন টি-শার্ট আর মুখভরা আশা-প্রত্যয়ের প্রকাশ নিয়ে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠক হাছানুল করিম।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এ.বি.এম. ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে বলেন,
“আপনারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনাদের দাবি ও চাহিদা আমরা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব।”
তিনি আয়োজক কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫,০০০ টাকা অনুদান প্রদান করেন, যা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফেরদৌসী বেগম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ, এনডিসি এ. জেড. এম. নাহিদ হোসেন এবং সহকারী কমিশনার নোমান ইবনে হাফিজ।
মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি তুলে ধরেন তাঁদের কাজ, অভিজ্ঞতা এবং স্বপ্নের কথা। কেউ বলেন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর গল্প, কেউ রক্তদানের অভিজ্ঞতা শোনান প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আবার কেউ নারীর নিরাপত্তা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। আলোচনায় উঠে আসে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়, যা ভবিষ্যতে জেলার সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্য হবে একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম।
এই মিলনমেলা শুধু আলোচনার জায়গা ছিল না, বরং ছিল একটি উৎসবমুখর দিন।
দিনের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, যা আয়োজনের পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এরপর মধ্যাহ্নভোজে একসাথে খাওয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে আন্তরিক বন্ধন। বিকেলে আয়োজিত হয় বাস্কেটবল নিক্ষেপ ও হাড়িভাঙা প্রতিযোগিতা, যা ছিল মজার ও প্রাণচঞ্চলতার কেন্দ্রবিন্দু।
সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল গান, নাচ, আবৃত্তি—যা মিলনমেলাকে করে তোলে আরও বর্ণিল ও প্রাণবন্ত।
এই আয়োজন প্রমাণ করে দিয়েছে, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার শুধু স্লোগান নয়—তা হয়ে উঠতে পারে বাস্তব কর্মকাণ্ড ও তরুণদের সম্মিলিত চেষ্টায়।
খাগড়াছড়ি জেলার যেখানে বিভিন্ন সংগঠন উপস্থিত ছিলেনঃ
১) খাগড়াছড়ি ব্লাড ডোনার্স এসোসিয়েশন
২) আস্থা ব্লাড ডোনার্স ফোরাম (এবিডিএফ) মাটিরাঙ্গা উপজেলা
৩) Dream tache Bangladesh
সে সময় আরো অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠন উপস্থিত ছিলেন।
দিনের শেষে পাহাড়ের গায়ে আলো মিশে গেলেও এই মিলনমেলার স্পন্দন থেকে যাবে খাগড়াছড়ির প্রতিটি কোণায়। স্বেচ্ছাসেবার এই বন্ধন থেকে আগামী দিনে গড়ে উঠবে সমন্বিত ও কার্যকর সামাজিক শক্তির প্ল্যাটফর্ম।