নিজস্ব প্রতিবেদক
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব শফিউল আলম শফির বিরুদ্ধে সরকারি গাছ চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন রাস্তার পাশে রোপিত গাছগুলো কেটে বিক্রির ঘটনায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় এ মামলা রুজু হয়। মামলাটি দায়ের করেন জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. রাশেদুজ্জামান। জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইসরাত জাহান ছনির নির্দেশে গত ২৪ মে নাগেশ্বরী থানায় মামলাটি দায়ের হয় (মামলা নং: ২১/১০২)।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৬ ও ৭ আগস্ট কুমরপুর-ভিতরবন্দ-নুনখাওয়া সড়কের পাশ থেকে ৬টি সরকারি গাছ—৩টি ইউক্যালিপটাস, ১টি জাম, ১টি রেইনট্রি ও ১টি শিমুল—কেটে ফেলা হয়। এসব গাছের আনুমানিক বাজারমূল্য ৯৫ হাজার টাকা। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান শফির নাম উঠে আসে।
জেলা পরিষদ দাবি করেছে, উক্ত গাছগুলো তাদের রোপণকৃত এবং মালিকানাধীন। বন বিভাগও জানিয়েছে, ওই এলাকায় তাদের কোনো গাছ রোপণ করা হয়নি। ফলে গাছ কর্তনের দায়ভার সরাসরি জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত বলেই ধরা হচ্ছে। তদন্তভার দেওয়া হয়েছে নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবু শাহিনের ওপর। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মামলার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। স্থানীয় সূত্র জানায়, মামলা হওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো গ্রেপ্তার হয়নি। স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতার দাবি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতারা চেয়ারম্যান শফিকে রক্ষা করতে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন স্পষ্ট দুর্নীতির ঘটনা সত্ত্বেও কিছু জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যম বিষয়টি প্রকাশে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও গণমাধ্যমের দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এক প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান যদি প্রকাশ্যে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে সেটা চুরিই তো! আমাদের আস্থা কোথায় থাকবে?”
এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগও রয়েছে
জানা যায়, চেয়ারম্যান শফির বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্পের অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগে পূর্বেও তদন্ত হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা’ সংগঠনের এক নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা বিএনপি নেতা বলেন,
“দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। না হলে জনসমর্থন হারাতে হবে।”
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধির সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।