পাইকগাছা(খুলনা)প্রতিনিধি।।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির সিলেমানপুর গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আতিয়ার হোসেন (৪২) আয়ের একমাত্র উৎস ইঞ্জিনচালিত ভ্যান হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিন সদস্যের পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আগে থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে দিনযাপন করছিলেন আতিয়ার। সরকারি সহায়তা বলতে বছরে ঈদে মাত্র ১০ কেজি চাল ছাড়া কিছুই জোটেনি তার ভাগ্যে।
জীবিকার একমাত্র সম্বল ছিল একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, যা চালিয়ে কোনো রকমে সংসারের খরচ চালাতেন তিনি। কিন্তু সেই ভ্যানটিও সম্প্রতি চুরি হয়ে গেলে ভেঙে পড়ে আতিয়ারের পরিবার। সোমবার(৩০জুন) সরেজমিনে দেখা গেছে, আতিয়ারের বসতঘরটি মাটির তৈরি দেয়াল ও পুরনো আমলের টালির ছাউনিতে নির্মিত, যা ঝড়-বৃষ্টিতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টি হলে ছাউনি দিয়ে পানি পড়ে, আর ঝড় হলে ঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে প্রতি মুহূর্তে।
ভ্যান চুরির দিনটি সম্পর্কে আতিয়ার জানান, গত ১৩ জুন শুক্রবার সকালে প্রতিদিনের মতো ভ্যান নিয়ে বের হই। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০০ টাকা আয় করি। জুমার নামাজের সময় হলে আগড়ঘাটা বাজার জামে মসজিদের পাশে ভ্যানটি তালা দিয়ে নামাজে যাই। নামাজ শেষে ফিরে এসে দেখি, ভ্যানটি আর নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনি।
আতিয়ার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাড়িভিটা ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই আমার। নতুন একটি ভ্যান কেনার সামর্থ্যও নেই। এখন ভ্যান না থাকায় দিনে এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। কখনো কখনো মনে হয় আত্মহত্যা করি, কিন্তু স্ত্রী-সন্তানের মুখ চেয়ে আর পারি না।
স্ত্রী জলি বেগম চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, আমাদের সংসার শুধু ওই ভ্যানের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন ভ্যান না থাকায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ কি নেই, যে আমাদের একটা ভ্যান কিনে দিয়ে পাশে দাঁড়াবে?
সংবাদ সংগ্রহের সময় উপস্থিত এলাকাবাসি জানান, আতিয়ার একজন প্রকৃত অসহায় মানুষ। তার ভ্যানটি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে পুরো পরিবার বিপাকে পড়েছে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন আতিয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ভ্যান কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
বর্তমানে আতিয়ার ও তার পরিবার সমাজের সহানুভূতির একটুকরো আশায় দিন গুনছে—যদি কেউ এগিয়ে আসে তাদের দুঃখ দুর্দশা কিছুটা লাঘব করতে।