নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড দেবিদাশপুর পুরাতন ব্যাটারী আগুনে জ্বালিয়ে সিসা তৈরি করছে।
হুমকির মুখে প্রাকৃতিক পরিবেশ জীব ও বৈচিত্র্য।
কারখানার দুষিত ধোঁয়ায় এলাকাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
এই অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা মালিক গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের মোঃ আয়নুল ইসলাম।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেবিদাশপুর রাতের আঁধারে পুরাতন ব্যাটারী আগুনে জ্বালিয়ে সিসা তৈরি করে।
সারাদিন কারখানা বন্ধ থাকলেও অন্য এলাকায় ভাড়া যায়গায় লেবার মালামাল রেখে ব্যাটারী কেটে শুধু প্লেট ও কয়লা ট্রলিতে করে নিয়ে এসে, রাতের আঁধারে কাঠ কয়লার আগুনে জ্বালিয়ে সিসা তৈরি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান প্রতিদিন রাত্রি ৯ ঘটিকা হইতে ভোর ৫ ঘটিকা পর্যন্ত যখন ব্যাটারীর প্লেট আগুনে জ্বালিয়ে সিসা তৈরি করে।
তখন কারখানার আশেপাশে ২/৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গন্ধ ছড়ায় ও বাড়ির ভিতর থাকা লোকজনের চোখ মুখ জ্বালা করে।
এলাকার বৃদ্ধ ও কোমলমতি শিশুরা প্রতিনিয়ত শ্বাস-কষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান এরা স্থানীয় কিছু ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে রেখেছে, এদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ জোর করে কখনোই মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পায়না, কেউ কিছু বললেই বিভিন্ন মামলা হামলা নির্যাতনের ভয় দেখায় তারা।
এই অবৈধ সিসা তৈরির কারখানার জন্য নষ্ট হচ্ছে ধান, পাট, রবিশস্য, বিলের মাছ, গাছের ফল, ডাব গাছে ডাব ধরে কিন্তু পানি থাকেনা।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান এই কারখানার সিসা তৈরি করার সয় ছাই বাতাসে যতোদূর গিয়ে পড়বে সেই এলাকার জমির ঘাস খড় খেলেই গরু মারা যাবে, তাই এলাকাবাসী গবাদিপশু মৃত্যুর ভয়ে মাঠের ঘাস খড় খাওয়াতে পারছেনা।
এরই সুত্র ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা নিউজ ও টেলিভিশন নিউজে জানা যায়।
২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিসা তৈরির কারখানায় ৩ মাসে ২৫টি গরু মারা গেছে।
সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
২০২৩ সালে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে সিসা তৈরির কারখানা কারনে ৭ গরুর মৃত্যু।
সুত্রঃ সময়ের কন্ঠস্বর
২০২৩ সালে সিসা কারখানার নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য খালে হবিগঞ্জের মাধবপুরে পানি খেয়ে ১২ গরুর মৃত্যু।
সুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা।
২০২৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল সিসা তৈরি কারখানা এলাকার মাঠের ঘাস, লতা ও আঁখের পাতা খেয়ে ১২টি গরু মারা গেছে।
সুত্রঃ বাংলাভিশন টেলিভিশন।
২০২২ সালে ধামরাই সিসা তৈরি কারখানায় তিন মাসে ৮ গরুর মৃত্যু, অসুস্থ অর্ধশতাধিক।
সুত্রঃ দৈনিক জনবানী
২০২২ সালে নরসিংদীর বেলাবতে পাঁচ দিনে হাফিজ অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স নামের একটি খামারে একে একে পাঁচটি গরুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
২০২২ সালে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সিসা তৈরি কারখানার পাশে দুটি গ্রামে ৩০টি গরুর মৃত্যু।
সুত্রঃ আজকের পত্রিকা।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার চারাতলা নামক স্থানে অবৈধ সীসা কারখানার বিষক্রিয়ায় ১২ টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
সুত্রঃ Rtv
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুর এলাকায় অবৈধ সিসা তৈরির কারখানার পাশের জমির ঘাস খেয়ে ১ গরীব কৃষকের ২ টি গরু মারা যায় পরবর্তীতে এলাবাসীর অভিযোগে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা উচ্ছেদ করে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নানের ইট ভাটায় অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা উচ্ছেদ করেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া।
২০২৫ সালের ৬ ই মার্চ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাঙ্গা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করেন।
১ টি অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা উচ্ছেদ করেন।
গুগলে সার্চ দিয়ে জানাযায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও শতাধিক কারখানার কারণে গরু মারা গেছে এমন তথ্য মেলে,আরও জানাযায় দেশের যে যে এলাকায় পুরাতন ব্যাটারী আগুনে জ্বালিয়ে সিসা তৈরির কারখানা করে সেই এলাকার মাঠের ধান নষ্ট, পুকুর ও বিলের মাছের নিধন হয়েছে।
এ ব্যপারে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা মালিক মোঃ আয়নুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পরিবেশ অধিদপ্তর এর ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের খোলা কারখানার কোনো কাগজপত্র হয়না, আমরা বিভিন্ন মহলে টাকা পয়সা দিয়ে, ম্যানেজ করে কারখানা চালাই।
এরআগে কুষ্টিয়াতে দের দুই বছর সিস্টেমে কারখানা চালিয়েছি, বর্তমানে এখানে চালাচ্ছি, আপনি নিউজ করলে হয়তোবা ১-২ দিন কারখানা বন্ধ রাখবো আবারও চালাবো কারণ আমি সবাইকে এখানে ম্যানেজ করেই চুলায় আগুন দিয়েছি।
এলাকাবাসী অতি দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মালামাল জব্দ করে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানাটি উচ্ছেদ করতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর, যশোর জেলা প্রশাসক জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।