নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের দৈনিক ঢাকা মেইল পত্রিকা’র টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী’র প্রিয় বাবা, অধ্যাপক বাণীতোষ চক্রবর্তী (বাণী স্যার), আজ আমাদের মাঝে নেই।
তিনি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ডুবাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে রোববার, ৫ অক্টোবর ২০২৫, দুপুর ৩:৩০ মিনিটে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।
পুনশ্চঃ রাত বারোটায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।
বাণী স্যার ছিলেন গোপালপুর ও উত্তর টাঙ্গাইলের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া জগতের এক অবিসংবাদিত নাম। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন অনন্য দৃষ্টান্ত। শুধু কলেজের ক্লাসরুমে নয়, তিনি সারাজীবন ছাত্রদের প্রতি ছিলেন গুরুর মতো দায়িত্বশীল ও স্নেহময়। ছাত্রদের মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে যে নিষ্ঠা, পরিশ্রম এবং সময় তিনি ব্যয় করেছেন, তা আজও স্থানীয় শিক্ষাজগতে অনুকরণীয়।
বাণী স্যার শিক্ষাকে কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেন না। তিনি শিক্ষাকে জীবনমুখী করেছিলেন। তার শিক্ষাদানের ধরন ছিল বোধগম্য, সহানুভূতিশীল এবং অনুপ্রেরণামূলক। ছাত্রদের শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে শেখাতেন না, বরং তাদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীলতা গড়ে তুলতেও তিনি সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তাকে শুধু শিক্ষক বা অধ্যাপক হিসেবে নয়, বরং একজন পরামর্শদাতা, বন্ধু এবং জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে রাখে।
শিক্ষা ও জ্ঞানের পাশাপাশি বাণী স্যারের সংস্কৃতি, সাহিত্য, সংগীত ও ক্রীড়ার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ ও প্রেম। তিনি সংস্কৃতি চর্চায় ছিলেন এক বটবৃক্ষের মতো অভিভাবক, যিনি নতুন প্রজন্মকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং উদার মনোভাব শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অম্লান ছাপ রেখেছে। তিনি প্রায়শই বলতেন যে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শুধু জ্ঞান অর্জন নয়, বরং মানবিক গুণাবলী ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ।
বাণী স্যার ছিলেন একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, পিতা, সমাজসেবক এবং সংস্কৃতিচর্চায় পথপ্রদর্শক। তিনি ছিলেন একজন হৃদয়বান পিতা, যিনি তার সন্তানদের প্রতি মমতা ও দায়িত্বের চরম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তার সন্তানরা শুধু শিক্ষিত নয়, বরং নৈতিক ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে।
তার শিক্ষাজীবন ছিল এক দীর্ঘ এবং সফল যাত্রা। তিনি টাঙ্গাইল জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। কলেজের শিক্ষক হিসেবে তার জীবন শুধুমাত্র পাঠদান ও পরীক্ষা পর্যালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি সমস্যায় দিকনির্দেশনা দিতেন, তাদের মনের খেয়াল রাখতেন এবং যে কোনো সংকটে সমাধান খুঁজে দিতেন। তার এমন দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষাদান পদ্ধতি স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিল।
বাণী স্যারের মানবিকতা ও উদার মনোভাব শুধুমাত্র শিক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সমাজসেবায়ও ছিলেন অগ্রণী। গোপালপুর ও উত্তর টাঙ্গাইলের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নে তিনি যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং সাংস্কৃতিক সংস্থায় সদা সক্রিয় ছিলেন। তিনি নিয়মিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতেন এবং স্থানীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতেন।
তার ব্যক্তিত্বে মিলিত ছিল জ্ঞান, মানবতা, সহমর্মিতা এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনের অমিত শক্তি। যে কোনো সমস্যায় তিনি দৃষ্টান্তস্বরূপ সমাধান দিতেন। শিক্ষার্থীরা শুধু তার পাঠ্যপুস্তকীয় জ্ঞানই নয়, বরং জীবনের মূলনীতি, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং উদার মনোভাবও তার কাছ থেকে শিখেছে। বাণী স্যার কেবল একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে অনুপ্রেরণা জোগায়।
তার অকাল প্রয়াণ আমাদের সকলের জন্য গভীর শোকের কারণ। একজন মহান শিক্ষক, সমাজসেবক, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রেমিক, পিতা এবং মমতাময় মানুষ আমাদের মাঝে নেই—এই শূন্যতা কখনও পূর্ণ হবে না। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
দৈনিক ঢাকা মেইল পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা বাণী স্যারের শিক্ষা, মানবিকতা, উদার মনোভাব এবং সমাজসেবায় অবদানের চিরন্তন মর্যাদা স্মরণ করছি। তার জীবনের দৃষ্টান্ত নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও সমাজসেবকদের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শেখায় কিভাবে জ্ঞান, সহমর্মিতা, ধৈর্য ও মননশীলতা দিয়ে সমাজ ও শিক্ষাজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।
বাণী স্যারের অবদান, তার শিক্ষাদান পদ্ধতি, তার উদারতা এবং মানবিক মনোভাব আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তার আদর্শ, নৈতিকতা ও দৃষ্টান্ত আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবকদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। তার শিক্ষা শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে দিকনির্দেশক।
আজ আমরা শোকাহত হয়েছি, তবে তার স্মৃতির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। বাণী স্যারের বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাকুক এবং তার জীবন ও অবদান চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকুক।