শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ- বান্দরবানের রুমা উপজেলায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য আয়োজিত এক চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্পে নারী-পুরুষসহ মোট ৬৪৬ জন রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ২৮০ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা, ওষুধ এবং চশমা গ্রহণ করেছেন। বাকি ২৬২ জন রোগীকে ছানি অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চট্টগ্রামের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ছানি অপারেশন করা হবে।
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রুমা উপজেলার ২নং সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মংয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়, পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা, রুমা সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংসিনু মারমা এবং রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিরা বম-এর নেতৃত্বে এই চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনকালে কেএস মং বলেন, “চক্ষু চিকিৎসা সেবা হচ্ছে মানব জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেবা। নিজের মন থেকে এই উপলব্ধি থেকেই এর আগে রোয়াংছড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে আমার ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় চক্ষু চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।”
তিনি আরও জানান, এই কার্যক্রম ভবিষ্যতে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলাতেও পরিচালিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৩৬ বীর রুমা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী সরকার। তিনি বলেন, “চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে দুর্গম এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সেনাবাহিনী সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বান্দরবানে সব উন্নয়ন কাজে যদি একসঙ্গে কাজ করা যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে সম্প্রীতির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ১নং পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা।
চক্ষু সেবা ক্যাম্পে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমেন তালুকদার এবং তার চিকিৎসক দল।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাইফুর রহমান জুয়েল জানান, “এর আগেও চট্টগ্রাম লায়ন্স হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রমে কোয়ান্টাম সহযোগিতা করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যাম্পে দুই শতাধিক রোগীকে প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চশমা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া, ছানি সমস্যায় আক্রান্ত ২৬২ জন রোগীকে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে অপারেশনের জন্য পাঠানো হবে, সম্পূর্ণ বিনা খরচে।
এদিকে, একই সময়ে ৩৬ বীর রুমা জোনের উদ্যোগে রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে একটি পৃথক বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন ৩৬ বীর রুমা জোনের এসএমসি আরএমও ক্যাপ্টেন মোঃ সোহাগ মিয়া সজীব এবং এএমসি আরএমও ক্যাপ্টেন ওমর ফারুক।
স্থানীয়রা জানান, “পাহাড়ি জনপদের সাধারণ মানুষের জন্য এমন উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এতে অনেক দরিদ্র মানুষ ঘরে বসেই কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।”