আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:- সিরাজগঞ্জে যুগ যুগ ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করে যোগাড় করা তিন বস্তা টাকা জমানো সেই ভিক্ষুক সালেহা বেগম (৬৫) মারা গেছেন।
ভিক্ষা করে তিন বস্তা টাকা জমিয়ে আলোচনায় আসা সালেহা বেগম অবশেষে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হলেন। স্থানীয়ভাবে সবাই তাকে ‘সালে পাগলী’ নামে চিনতেন। শুক্রবার ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শনিবার ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টায় শহরের কান্দাপাড়া কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। দীর্ঘদিন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকায় প্রথমে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তার লিভার ক্যান্সার শনাক্ত করেন।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ শাহরিয়ার শিপু জানান, “সালে পাগলী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার মৃত্যু হওয়ায় আজ শনিবার আমরা দাফনের কাজ সম্পন্ন করেছি। তার চিকিৎসা বাদে অবশিষ্ট অর্থ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী বণ্টন করা হবে।”
সালেহা বেগমের জীবন ছিল দুঃখ ও সংগ্রামের এক করুণ কাহিনি। বৃদ্ধা হয়েও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বেরিয়ে যেতেন, মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়ে তাদের দয়া ও ভালোবাসার ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কঠোর পরিশ্রম ও মানবিকতার মিশেলে গড়া তার জীবনের গল্প সম্প্রতি সারা দেশে আলোচিত হয়েছিল।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মাছুমপুর নতুনপাড়ায় তার বসতঘর থেকে স্থানীয়রা দুই দিনের ব্যবধানে তিন বস্তা টাকা উদ্ধার করেন। সেখানে মোট ব্যবহারযোগ্য টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯ টাকা। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয় এবং মানুষ সালেহা বেগমের সংগ্রামী জীবন ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়।
স্থানীয়দের মতে, সালেহা বেগম শুধু নিজের জীবনের জন্য সংগ্রাম করেননি, তিনি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার কষ্টভরা জীবনের মধ্যেও সততার মানসিকতা ও পরিশ্রমী মনোভাব সমাজে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সালেহা বেগমের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য এক গভীর হৃদয়বিদারক ক্ষতি। তার জীবনের গল্প এবং সততার প্রতীক হয়ে ওঠা সেই তিন বস্তা টাকার গল্প আমাদের সমাজকে নতুন করে ভাবতে শেখায় —
দারিদ্র্য থাকলেও সততার সঙ্গে বেঁচে থাকা সম্ভব।