শৈহ্লাচিং মার্মা, রুমা প্রতিনিধি, বান্দরবান:- বান্দরবানের রুমা উপজেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুমা সাঙ্গু সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার এক দশক পেরোলেও নানা সংকটে জর্জরিত অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষক সংকট, যাতায়াত সমস্যা ও শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে কলেজের সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের দাবিতে ২০০১ সালে ৩৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রুমা সাঙ্গু কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আগে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ৩০০ আসন বান্দরবান বিএনপির মনোনীত সাংসদ প্রার্থী সাচিংপ্রু জেরী কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দুই লাখ টাকা অনুদান দেন।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সময়কালে ছাত্রলীগের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি আমলে আর্থিক সংকট দেখা দিলে কলেজটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে অগ্নিকাণ্ডে কলেজটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
২০১২ সালের নভেম্বর মাসে রুমা সাঙ্গু সেতু উদ্বোধনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুমায় একটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে একাডেমিক ভবনসহ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।
বর্তমানে কলেজে ১১টি শিক্ষক পদ থাকলেও বাংলা, ব্যবস্থাপনা ও ফিন্যান্স—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত শিক্ষক নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস পাচ্ছেন না এবং পরীক্ষার ফলাফলেও এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
বাংলা বিভাগের ছাত্রী তাজহিয়া সুলতানা বলেন, “বাংলা বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় পাশের হার খুব কম। একজন শিক্ষক থাকলে ফলাফল ভালো হতো।”
কলেজে যাতায়াত সুবিধার্থে একটি গাড়ি থাকলেও চালক না থাকায় তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারযোগ্য নয়। দূরবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ৮০–১০০ টাকা খরচ করে কলেজে আসতে হয়। এজন্য অনেকেই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেন না।
শিক্ষার্থী মৌমিতা চৌধুরী তিশা বড়ুয়া ও সেতু বড়ুয়া জানান, “যাতায়াতে অনেক খরচ হয়। গাড়ি থাকলেও চালক নেই, তাই কলেজে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত ক্লাসে না এলে ফলাফলও খারাপ হয়।”
এ বছর রুমা সাঙ্গু সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ১২৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ৮ জন এবং ফেল করেছেন ১১৭ জন। ভয়াবহ এই ফলাফলকে কেন্দ্র করে এলাকায় সমালোচনা দেখা দিয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে ফল আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুইপ্রুচিং মার্মা বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত সাময়িক পরীক্ষা, মাসিক মূল্যায়ন এবং তিন মাস পরপর অভিভাবক সভা হলে শিক্ষার মান উন্নত হবে। অভিভাবকদেরও সন্তানের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষক সংকট ও যাতায়াত সমস্যা সমাধান হলে কলেজ আবারও ভালো ফলাফল করতে পারবে।”
রুমাবাসী মনে করেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে পার্বত্য অঞ্চলের এই একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আবারও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে।