মো: এলাহী, মালয়েশিয়া :
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সিন্ডিকেট প্রথা বন্ধ করতে এবং এ খাতকে স্বচ্ছ ও ন্যায্য করতে দেশটির সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন ক্লাং রাজ্যের সাবেক এমপি ও আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (APHR) সহ-সভাপতি মিস্টার চার্লস সান্তিয়াগো।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে (FMT)-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সান্তিয়াগো বলেন, পুত্রাজায়া ও ঢাকার মধ্যে একটি বাধ্যতামূলক দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জরুরি, যা ছাড়া সিন্ডিকেটগুলো শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখবে, শিল্প খাত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে এবং মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক পরিসরে বদনামের শিকার হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক (MoU) “দন্তহীন”—কারণ এতে কোনো জরিমানা, শাস্তি বা লাইসেন্স বাতিলের বিধান নেই। ফলে সিন্ডিকেটগুলো অবলীলায় শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।
চার্লস সান্তিয়াগোর অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় চাকরি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রায় ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা) পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। এতে মালয়েশিয়ার মাটিতে পা রাখার আগেই তারা ঋণের দুঃস্বপ্নে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। তিনি এটিকে “দাসত্বের মতো পরিস্থিতি” আখ্যা দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজন বাংলাদেশি উপদেষ্টা (ড. আসিফ নজরুল) মন্তব্য করেছেন—কর্মী নিয়োগের বর্তমান চুক্তি সংশোধন না হলে বাংলাদেশ সরকার তাদের নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার হাতে নিয়োগকারী এজেন্সির তালিকা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যা সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মিস্টার সান্তিয়াগো বলেন, “বাংলাদেশের একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এই চুক্তি পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে স্বাক্ষরিত। সেটি এখন সংশোধন জরুরি, কারণ এটি নিয়োগকারী এজেন্সির সিন্ডিকেটকে কাজ করতে অনুমতি দিয়েছে। এখন আমরা দায়িত্বে আসার পর, সবাই বলছে সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি মালয়েশিয়া রাজি না হয়, তবে আমাদের দুটি বিকল্প— হয় তাদের শর্ত মেনে নিয়ে ২৫, ৫০ বা ১০০টি প্রতিষ্ঠান দিয়ে কর্মী পাঠানো, নয়তো পুরোপুরি কর্মী পাঠানো বন্ধ করা।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী বছর মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ কর্মী নিয়োগ করবে। তবে সে প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সিন্ডিকেটমুক্ত না হলে সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মনে করছেন মানবাধিকার নেতারা।